নামাযে মনোযোগ তৈরির কৌশল
১। নামায আরম্ভ করার সময় একান্ত প্রয়োজনীয় কোন কাজ না থাকলে তা আগে সেরে নেয়া ভাল, তাহলে নামাযের মধ্যে সেইদিকে মন যাবে না। এই জন্য শরিয়াতের নির্দেশ হল, কারও যদি বেশি ক্ষুধা লাগে আর খানা তৈরি হয়ে যাই অথবা প্রসাব-পাইখানা বেগ হয়, তবে আগায় এসব কাজ সেরে নিতে হবে। তার কারন হল বান্দা একটি অবসর মন নিয়ে নামায সুরু করবে,তাহলেই সে নামাযের হক আদাই করতে পারবে।
২। হাট-বাজারে বা সফরে থাকলে সাথের জিনিসপত্র নিরাপদ জাইগাই রাখতে হবে, যাতে এসব হারানর চিন্তায় না পরতে হয়।
৩। অথা-বসা কষ্টকর হয় এমন টাইট-ফিট পোশাক পরে নামায পরা উচিত নয়। পোশাক জাতে পরে না যাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে, নামাযে মন থাকার পরিবতে পোশাক ঠিক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
৪। বেপর্দা মহিলারা যখন মাথায় কাপড় বা চাদর পরে নামায পড়ে, তখন শাভাবীকভাবে তাদের গোড়োম লাগে। এতে নামাযে মন বসে না এবং তাড়াতাড়ি নামায শেষ করে চাদর খুলার চেষ্টা করে। সুতরাং মহিলাদের নামাযী হওয়ার সাথে সাথে পর্দানশীল হতে চেষ্টা করা আবশ্যক। মহিলাদের
জন্য এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী।৫। নামাযের সময় ঘুম এলে যথাসম্ভব তা দূর করে নামায পড়া ঠিক হবে। নবী (সাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেও নামায পড়ার সময় ঝীমাতে থাকলে সে যেন একটু শূয়ে ঘুম তাড়িয়ে নেয়। নতুবা সে হয়তো আল্লাহের কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালী দিয়ে বসবে। ( বুখারী, মুসলিম)।
নবী (সাঃ) বলেন, কেউ নামাযে ঝীমালে সে যেন ঘুমিয়ে নেয়। যাতে সে কী পড়ছে তা বুঝতে পারে। (বুখারী)।
অবশ্য এমন ঘুম বৈধ নয়, যাতে নামাযের সময়ই পার হয়ে যাই।
৬। যথাসম্ভব নীরবে নামায পড়া চাই, কোন বড় জায়গায় নামায পড়তে হলে সামনে সুত্রা/লাঠি বা অন্য কিছু রেখে অথবা খুঁটি/দেয়ালের কাছাকাছি গিয়ে নামায শুরু করা আবশ্যক,এতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৭। এমন কোন জিনিস সামনে রেখে নামাযে দাঁড়ানো ঠিক নয় জা দেখলে সেইদিকে মনোযোগ চলে যাই। আয়েশা (রাঃ) ছবিযুক্ত একখানা পর্দা দিয়ে একপাশ ঢেখে রেখেছিলেন, নবী (সাঃ) তাকে বললেন, এটি খুলে ফেল কারণ নামজের মধ্যে এর ছবিগুলো আমার নজরে পরে। (বুখারী)
৮। খুব তারাহুরা না করে একটু ধির-স্থিরভাবে নামায পড়তে হবে। প্রত্যেক রুকুনের হক আদায় করতে হবে। দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কতইনা মনজগ দিয়ে করি, কত সময় এতে ব্যয় করি আর নামজের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খুব তারাহুরা করে শেষ করে দেবো এটা কি ঠিক হবে?
৯। নামাযের কারনে কাজে যে বিরতি দেবো তাতে ক্ষতি হয়ে গেল মনে করব না বরং মনে করব- আমি যদি নামজের জন্য সময় ব্যয় করি, তাহলে আল্লাহ আমার সকল কাজে বরকত দেবেন। সময় আমাকে আল্লাহই দিয়েছেন, যিনি সময় দিয়েছেন, তাঁর কাজে সময় ব্যয় না করলে করবো কোথায়?
১০। নামজের গুরুত্ব ও মাহাত্তের কথা স্মরণ করে নামাযে দাঁড়াব। চিন্তা করবো যে, এ নামায আল্লাহের পক্ষ থেকে আমার জন্য এক বিরাট নেয়ামত। এর দ্বারা আমি আমার মালিকের নৈকট্য লাভ করবো এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক গরে তুলব। সুন্দর করে নামায আদায় করতে পারলে এর সওয়াব আমি নিজেই পাব আর একে নষ্ট করলে আমাকেই শাস্থি ভোগ করতে হবে।
১১। নামাযে দারিয়ে খেয়াল করবো আমি একজন অপরাধি- ক্ষমার ভিখারি, মালিকের অনুগ্রহপ্রার্থী, নিঃস্ব অসহায়- সাহায্যপ্রার্থী, পথভ্রষ্ট- পথের সন্ধানী, পীড়িত- নিরাপত্তা ও নিয়াময়ের ভিখারি, রুজিহিন- রুযীর ভিখারি। এসব ভিক্ষা আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কার কাছে পাব না। তাই তো আমি প্রতি রাকাতে বলে থাকি, “ আমারা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য কামনা করি”। (সূরা ফাতিহা-৪)
১২। নামায হবে আমার চক্ষু শীতলকারী, মন প্রশান্তকারি, সকল প্রকার ব্যথা ও বেদনার উপশমকারী। মহানবী (সাঃ) বলেন, “নামাযে আমার চক্ষু শীতল করা হয়েছে”। (আহমাদ, নাসাঈ)
একদা তিনি বিলাল (রাঃ) কে বললেন, হে বিলাল! নামাযের ইকামতের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্তি দাও। (আবূ দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহ)
১৩। আমি আল্লাহের বন্দেগী ও দাসত্ব করছি, এই দাসত্ব ঠিকমত হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। সুতরাং নিজের ত্রুটি স্বীকার করে মনকে ভীতিদ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা তাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে ভয়-ভয় মনে দান করে তারাই দ্রুত কল্যাণকর কাজ সম্পাদ্দন করে এবং তারা এতে আগ্রগামী হয়”। (সূরা মূ’মিনূন-৬০,৬১)
মা আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে বললেন, ওরা কি তারা যারা মদ খাই, চুরি করে এবং ব্যভিচার করে? নবী বললেন, না হে সিদ্দিকাতনয়া! বরং ( আল্লাহ তাদের কথা বলছেন) যারা রোযা রাখে, নামায পরে, দান খয়রাত করে, কিন্তু তাদের এসব কবুল হচছে কি না এই ভয়ে তারা ভীত থাকে। (আহমাদ, তিরমিযী)
আমাদের আরো ভয় করতে হবে যে, আমরা যতই এবাদত করিনা কেন, প্রয়োজনের তুলনাই তা খুবি কম। জান্নাতের মূল্য তো অবশ্যই নয়। নবী (সাঃ) কেউই তার আমলের জোরে জান্নাতে যেতে পারবে না। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি নন? নবী বললেন, আমিও না তবে যদি আল্লাহ তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছন্ন করেন তাহলে। ( বুখারী, মুসলিম)
১৪। নামাযে যখন দাঁড়াব তখন অবস্থাটা এমন হবে যে, কোন গোলাম তাঁর মালিকের সাথে বেয়াদবি করে পলায়ন করেছিল। অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তাঁর মালিকের কাছে লজ্জিত অবস্থায় ফিরে আসল এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো। একজন মিসকিনের মত নিজের ভুলের ক্ষমার জন্য আল্লাহের সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে মনে ধারনা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর খাস দরবারে হাজির হয়েছি। আমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, আর এইটুকু সম্ভব না হলে এ কথা অবশ্যই মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আমার সবকিছু দেখছেন, আমার নামায পড়াও দেখছেন। বান্দার কোনকিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়।
আমি নামাযের মধ্যে যাকিছু করবো ও পড়ব তিনি তা দেখবেন ও শুনবেন। নবী (সাঃ) বলেন, “ তুমি এমনভাবে এবাদত কর, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও (সেই স্তরে তুমি পৌঁছতে না পার) তবে অনতত এ ধারনা রাখ যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাকে দেখছেন”। ( বুখারী, মুসলিম)
এ প্রত্যয় নিয়ে নামাযে দাঁড়ালে ছুটে যাবে সাংসারিক সকল বন্ধন। শুধু টিকে থাকবে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে মুনাজাত ও গভীর আলাপন।
১৫। নামাযে দাঁড়ালে মনে করতে হবে যে আমি আল্লাহর সাথে একান্ত নিরালায় আলাপন করছি। সুতরাং কার সাথে কানে-কানে কথা বলার সময় মন ও খেয়াল কি অন্য দিকে থাকতে পারে? নবী (সাঃ) বলেন, “ অবশ্যই নামাযী তার প্রভুর সাথে নির্জনে আলাপ করে”। ( আহমাদ, মিসকাতুল মাসাবীহ )
১৬। নামাযে দাঁড়িয়ে ধরে নেব এটা আমার জিবনের শেষ নামায। এর পর হয়ত আর সুযোগ পাব না। যেন আমি আমার প্রিয়তমের নিকট থেকে বিদায়কালে শেষ সাক্ষাৎ করছি, শেষ কথা বলছি ও শেষ আবেদন জানিয়ে নিচ্ছি। এমন মুহুর্তে মন কি অন্য দিকে ছুটতে পারে? এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দেন। তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন শেষ নামায পড়ার মত নামায পড়ো। এমন কথা বলো না, যা বলে ক্ষমা চাইতে হয়। আর লোকদের হাতে যা আছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাও। ( আহমাদ, সিলসিলা সহীহাহ- ৪০১)
১৭। নামাযে দাঁড়িয়ে আমি স্মরণ করবো, আমাকে মরতেই হবে এবং ফিরে যেতে হবে সেই বিশাল বাদশার নিকট। তাঁর কাছে সকল কাজের হিসাবও দিতে হবে। নবী (সাঃ) বলেন, “ তুমি নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ মানুষ যখন তাঁর নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথারথয় সে তার নামাযকে সুন্দর করে”। ( সহীহুল জামে, সিলসিলা সহীহাহ- ১৪২১)
এসকল উপদেশ মেনে চললে ইনশাল্লাহ নামাযে রুহ আসবে এবং তা কায়েম হবে, আর এ নামায হবে নামাযীকে মন্দ কাজ হতে বিরতকারী।
সংগ্রহ করেছিঃ
কোরআন, হাদীস ও বিজ্ঞানের আলোকে মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়
মাওলানা আব্দুর রাহমান
সিনিয়র শিক্ষক
মাদরাসাতুল হাদিস, নাজির বাজার, ঢাকা
চেয়ারম্যান
ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড
nice to read it
ReplyDeletejazak allah khairan
ReplyDelete